শিক্ষাবিদদের মতে, দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মসংস্থানের সঙ্গে সঠিকভাবে সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যানও এই উদ্বেগের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। গত ১৩ বছরে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের হার আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করা বেকারদের সংখ্যা মোট বেকারের ৪.৯ শতাংশ ছিল, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ৩১.৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমদ খান জানান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সারা দেশে ৩২৯ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্দেশ্যে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার জন্য ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি জেলায় মোট ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষক মন্তব্য করেন, “শিক্ষিতরা যে কোনো কাজ করতে চান না, তারা অফিসিয়াল কাজের প্রত্যাশা করেন। কিন্তু আমাদের দেশে ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক, যেখানে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কম। ফলে তারা বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন।” সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যাদের কোনো শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রতি হাজারে ১৫৩ জন, কিন্তু স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্নদের মধ্যে এই হার প্রতি হাজারে ৭৯৯ জন। ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শোয়াইব আহমদ খান আরও বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকার উল্লিখিত প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার আওতায় প্রতিটি উপজেলায় ৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। দানশীল ব্যক্তিদের জমি দান করার আহ্বান জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের জন্য দুইজন দানশীল ব্যক্তি জমি দান করেছেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দেশের ১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ৯২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অবহেলা ও অপরিকল্পনার কারণে সময় ও ব্যয় উভয়ই বেড়ে গেছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় এখন ২ হাজার ৫২০ কোটি ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করে এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যা প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা ও অপ্রাসঙ্গিক খরচের বিষয়টি তুলে ধরেছে। সরকারি অর্থের অপচয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।