দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গড়ে ওঠা পায়রা সমুদ্রবন্দর উজ্জ্বল সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে, তবে এটি সমালোচনার মুখেও পড়েছে। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, কিন্তু আয় হয়েছে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতিতে চলছে, এবং ২০৪৩ সালের মধ্যে লাভের টার্গেট করা হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ এটিকে দক্ষিণ বাংলার অর্থনৈতিক উত্থানের সোপান হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে ব্যয়বহুল ভুল হিসেবে অভিহিত করছেন।
বর্তমানে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আধুনিক জেটি নির্মাণ শেষ হয়েছে এবং রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। আন্ধারমানিক নদীর ওপর প্রায় ১.২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর কাজও চলছে। বন্দর ঘিরে স্থানীয় দোকানপাট, হোটেল-মোটেল, পরিবহন এবং নির্মাণকাজে হাজারো শ্রমিক যুক্ত হয়েছেন। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা আশিক আলী জানিয়েছেন, ৬৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি প্রস্তুত এবং আগামী বছরের জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চ্যানেলের গভীরতা সাড়ে ছয় মিটারের বেশি এবং ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন মালবাহী মাদার ভেসেল ভিড়তে পারে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গভীরতা ১০.৫ মিটারে উন্নীত করা গেলে এটি দেশের গভীরতম চ্যানেল হবে। ইতোমধ্যে দুটি হপার ড্রেজার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে নদীপথে পায়রা বন্দর সবচেয়ে সহজ ও কম খরচের পথ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সরকার সম্প্রতি পায়রাবন্দরের উন্নয়নে তিনটি নতুন প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিং, দুটি হপার ড্রেজার কেনা এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার জন্য প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ডিআইএসএফ প্রকল্পে প্রশাসনিক ভবন, সড়ক, পুনর্বাসন এলাকা, জেটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে, অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম মনে করেন, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর হতে পারবে না এবং এটি নদীবন্দর হিসেবেই থাকবে। গবেষণায় দেখা গেছে, বন্দরের নৌপথে বিভিন্ন স্থানে ৫ থেকে ১৫ মিটার গভীরতা রয়েছে এবং রাবনাবাদ চ্যানেলকে কার্যকর রাখতে বছরে ১০ কোটি কিউবিক মিটার পলি খনন করতে হবে, যা ব্যয়বহুল।
চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পায়রাবন্দর ঘিরে রয়েছে বৃহৎ পরিকল্পনা। পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারত্বে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে। বন্দরের লক্ষ্য ২০৪৩ সালের মধ্যে লাভজনক হওয়া এবং এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে পায়রাবন্দরে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন গতি আনতে পারে।
পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, এর সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।