বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত

bornomalanews
  • Update Time : শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৩ Time View

ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন এবং নিরাপত্তার জন্য শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগেরদিন সোমবার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলগুলোতে ৭৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ করা হয়েছিল।

তবে বাকি কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলেছে। গার্মেন্টস খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কারখানায় প্রবেশ করে ভাঙচুর করছে। এর সঙ্গে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়েছেন তারা। এতে করে নতুন সংকটের মুখে পোশাকখাত। এ অবস্থায় কারখানায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। যদিও পোশাক খাতের অস্থিরতা দ্রুত কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শিল্প কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে দুই শতাধিক কারখানায় উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। ফলে শিল্পের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)। বিপুল সম্ভাবনাময় এ খাত ঘিরে প্রায়ই অসন্তোষের বিষয়টি সামনে আসে। ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর থেকে আবার নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাধে।

তবে এবারের অসন্তোষের নির্ধারিত কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যারা কারখানা ভাঙচুর করছেন তাদের দাবি দাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন জনকণ্ঠকে বলেন, তারা আসলে কোনো দাবি দাওয়াই করছে না। আমরা তাদের চিনিও না। তারা গার্মেন্টস খাতের শ্রমিক নয়। বাইরে থেকে এসে কারখানা ভাঙচুর করে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি দাওয়া নেই।

তবে একটি পক্ষ হাজিরা ভাতা প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা এবং কারখানায় ৭০ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের কথা বলে গেছে। তাদের এই দাবিটিও আমরা বিবেচনায় রেখেছি। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা রপ্তানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আগের চেইন অব কমান্ড এখন নেই।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও এবারের বিশৃঙ্খলা থামাতে পারেনি। ফলে বিষয়টা ছড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগে এই ধরনের সমস্যা হলে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা হতো। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ মানুষগুলোও বদলেছে। ফলে শ্রমিক নেতারা বুঝে উঠতে পারছেন না কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি- এখানে এক ধরনের উস্কানি কাজ করছে।

কোনো তৃতীয় শক্তি চাচ্ছে দেশে এবং দেশের বাইরে কিভাবে তারা লাভবান হবে। এর মধ্যে হয়ত দেশের কিছু শক্তি থাকতে পারে যারা পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের সুবিধা হবে। আবার বাইরের শক্তিও হতে পারে যে, আমাদের দেশের পোশাক খাত খারাপ হলে তাদের ভালো হবে।

রবিবার এক অনুষ্ঠানে এমসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারুক আহমেদ বলেন, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। আমরা জানতে পেরেছি সারাদেশে শতাধিক কারখানায় হামলা হয়েছে। দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে আর্থিক ক্ষতির এ হিসাব কোনো সুনির্দিষ্ট জরিপের মাধ্যমে করা হয়নি, বরং শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে একটি অনুমিত হিসাব দাঁড় করানো হয়েছে।

প্রকৃত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে শিল্প খাতে যে অস্থিরতা চলছে দ্রুততম সময়ে এটি কমানো না গেলে শীঘ্রই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এজন্য শ্রমিক, মালিক, অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলিয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন ন্যায্য দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার পক্ষে। আমরা আশা করছি, শিল্প মালিকরা বিষয়টা বিবেচনা করবেন। সেই সঙ্গে যারা আন্দোলন করছেন, তারাও ধৈর্য সহকারে এসব বিষয় বিবেচনা করবেন।
শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে গত কয়েকদিন নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কারখানার মালিক, শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েও হয় সমন্বয় সভা। পুরো আশুলিয়ায় নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এরপরও আশুলিয়া শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ থামানো যাচ্ছে না। সোমবার বিজিএমইএ ভবনে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, কারখানার মালিকদের সমন্বয়ে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে রবিবার থেকে আশুলিয়ার সব কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এই ঘোষণায় রবিবার বেশ কয়েকটি কারখানায় যোগ দিয়ে একপর্যায়ে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান শ্রমিকরা। কারখানার ভেতর তারা বিভিন্ন স্লেøাগান দিতে থাকেন।

এদিকে, আশুলিয়ায় আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যাপক হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া সন্ধ্যায় আশুলিয়ার শিমুলতলীতে ইউফোরিয়া নামে একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। কারখানার কয়েকজন কর্মীকে তারা মারধর করেন। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর র‌্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল চন্দ্র। শ্রমিক নেতারা বলছেন, অন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা শ্রমিক নয়।

কারা আন্দোলন করছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার। মালিকপক্ষ বলছে, যৌথ বাহিনীর বারবার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের চেয়ে পুরুষ বেশি নিয়োগ দিতে হবে- এমন দাবিসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে ১০ দিনের বেশ সময় ধরে অসন্তোষ চলছে শিল্পাঞ্চলে। পোশাক কারখানায় পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। তবে গত কয়েকবছরে নারী শ্রমিকের হার অনেক কমেছে।

গবেষণা সংস্থা ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) পরিসংখ্যান বলছে, পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার এখন ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এক সময় এ হার প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল। বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে একটি মহল শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে বলেই এই অসন্তোষ। তবে কিছু কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আছে।

তৌহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে পোশাক খাতে মজুরি ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হয়নি। এখন মজুরির বাইরে নানা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন প্র্রমাণ করে, এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
জানা গেছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমের দেশগুলোয় উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পরও বিদেশী ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধের মতো ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর প্রথম পছন্দ হয়ে উঠে। এছাড়াও, স্থানীয় উৎপাদকরা পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম দেওয়ার পাশাপাশি তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন ও রানা প্লাজা কারখানা ধসের মতো শিল্প দুর্ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা মানগুলো মেনে চলছে।পণ্যের বহুমুখীকরণ ও মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোয় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তবে এ শিল্পে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তা নিশ্চিতভাবেই রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
আশুলিয়ায় ৪০ কারখানা বন্ধ : নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার থেকে জানান, সাভারের আশুলিয়ায় অধিকাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে নানা কারণে ৪০টি কারখানায় কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সড়কেও টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেশিরভাগ কারখানাই খুলেছে। কাজ চলছে। আগের ১৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। আর আজ ২১টি কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করছে না। তবে সড়ক কিংবা মহাসড়কে শ্রমিকরা কেউ অবস্থান নেননি। কারখানার ভেতরেই শ্রমিকরা অবস্থান করেন। সব মিলিয়ে ৪০টি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এখানে কোনো সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 bornomalanews24.com
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102