কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিশাল বালিয়াড়িতে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের আন্তরিক মিলনে, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। চারদিনের উৎসব শেষে পঞ্চম দিনে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা—শোভাযাত্রা, বাদ্য-বাজনা আর উৎসবের আনন্দমুখরতায় মুখরিত ছিল পুরো সৈকত এলাকা।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে জড়ো হন হাজারো ভক্ত ও উৎসুক মানুষ। এ বছর প্রশাসনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় কক্সবাজারে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা এসেছিলেন গজে (হাতি) চড়ে—যা সমৃদ্ধি ও শান্তির প্রতীক হলেও, বন্যা-জলবিপদের আশঙ্কারও বার্তা দেয়। বিদায়ের সময় তিনি গিয়েছেন দোলায়, যা কল্যাণ, রোগ-শোক মুক্তি এবং প্রশান্তির বার্তা।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাশ। বক্তারা বলেন, কক্সবাজার যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। প্রতিমা বিসর্জনের দিন সৈকতের বিশাল এলাকা সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের মহারণ্যে পরিণত হয়েছিল, যা কক্সবাজারের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে আরও জোরদার করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন শাহীন, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল, সাবেক এমপি আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুকসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলায় ৩১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে—এর মধ্যে ১৫১টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ১৬৬টিতে ঘটপূজা পালিত হয়। আয়োজক ও ভক্তদের মধ্যে ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস, তবে দেবী দুর্গার বিদায়ে সাগরের উত্তাল জলে বিষাদের সুরও বাজে।
সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আয়োজক কমিটির সমন্বয়ে কঠোর নজরদারি ছিল প্রতিটি মণ্ডপে। কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয় এই বছরের দুর্গোৎসব।
এভাবেই ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতি নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে, কক্সবাজারে আবারও প্রমাণিত হলো সম্প্রীতির অপরাজেয় জয়গান।