সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলা এ বৈঠককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল এবং আলোচনা শুরু হয়েছে। সাক্ষাৎ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এবং বিএনপি নেতারা এটি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
সেনাপ্রধানের এ সাক্ষাৎকে বিএনপি সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেই দেখছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সেনাপ্রধান সস্ত্রীক ম্যাডামের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার খোঁজ নিতে এসেছিলেন। এতে রাজনীতি বা অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি।”
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ সাক্ষাৎকে সৌজন্য হিসেবেই দেখা উচিত। এটি নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো কারণ নেই।”
খালেদা জিয়ার বাসভবনে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান বিএনপির নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর। সাক্ষাতের সময় বিএনপির কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ বৈঠকে তাঁরা একান্তে কথা বলেন।
সাক্ষাতের সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং তাঁর যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে খালেদা জিয়া আগামী সপ্তাহে লন্ডনে যেতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান মনে করেন, “খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের এ সাক্ষাৎ নির্বাচনসহ দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো বার্তা বহন করতে পারে। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয় বরং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।”
৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ রাজনীতিক খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ২০২২ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান।
এর আগে, গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান এবং বিমানবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আন্তরিক কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের এ সাক্ষাৎ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত নানা জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বার্তা বহন করতে পারে। বিশেষত, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামীর করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও অনেকের ধারণা।
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার আগে সেনাপ্রধানের এই সৌজন্য সাক্ষাৎকে বিভিন্ন মহল ইতিবাচকভাবে দেখছে। সাক্ষাতের বিস্তারিত জানা না গেলেও এটি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকে গুরুত্ব বহন করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।