**শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থান: উত্তাল পরিস্থিতির মাঝে নতুন সংকট**
গত বছরের ৫ আগস্ট, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তার whereabouts ছিল এক রহস্যময় অধ্যায়। নয়াদিল্লি থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি, যেন তিনি অদৃশ্য হয়ে গেছেন।
কিন্তু সম্প্রতি, ভারতে বসে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন শেখ হাসিনা। ৫ ফেব্রুয়ারি, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তার বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। রাতের অন্ধকারে, ক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার পর, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়; দুই দেশের দূতদের তলব-পাল্টা তলবের ঘটনা ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে, আগামী সপ্তাহে ওমানের রাজধানী মাস্কটে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এই বৈঠকে, জয়শঙ্করকে শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, তারা শেখ হাসিনাকে ‘ফুলস্টপ’ করানোর বার্তা দিতে চান।
বাংলাদেশ সরকার ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছে, যেন শেখ হাসিনা সংযত হন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ওমানের মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আমাদের বৈঠক হবে।” দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের পেছনে রয়েছে গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, যা ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ককে অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে।
বিশেষ করে, বাংলাদেশে ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ এবং কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো। ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের পর, দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হলেও, জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সীমান্তের পরিস্থিতি আবার উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর, ঢাকা আবারও ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে প্রতিবাদ জানায়। ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল, শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় নিন্দা জানানো। কিন্তু ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতের এই মন্তব্যকে ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত।”
এদিকে, শেখ হাসিনাকে থামানোর পাশাপাশি প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছি, যেন শেখ হাসিনা বক্তব্য না দেন, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছে।”
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থান এবং তার বক্তব্যের প্রভাব দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ঢাকা কড়া অবস্থান নিতে প্রস্তুত। মাস্কটে অনুষ্ঠিতব্য ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্সের ফাঁকে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই বার্তা দেবেন যে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়, তবে তা যেন অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে না হয়।
এভাবে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে, শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।