টানা ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর, ১৯ জানুয়ারি থেকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে, যার প্রথম ধাপের মেয়াদ ৪২ দিন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে, যা গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের পথ প্রশস্ত করবে। আর শেষ ধাপে গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে—এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
কিন্তু, ইসরায়েলি কয়েকটি সূত্র সংবাদমাধ্যম হারেতজকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপে যেতে আগ্রহী নন। বরং, তিনি গাজায় আবারও যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একটি সূত্রের দাবি, নেতানিয়াহু কাতারের দোহায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন, যাদের উদ্দেশ্য ‘টেকনিক্যাল’ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা। তবে, এই প্রতিনিধি দলের কাছে দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করার কোনো ‘পাওয়ার’ নেই। আর কোন টেকনিক্যাল বিষয়ে আলোচনা করতে তারা গেছেন, সেটিও স্পষ্ট নয়।
অন্য একটি সূত্র বলছে, “নেতানিয়াহু জানেন, যদি তিনি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে রাজি হন, তাহলে তার সরকার টিকে থাকবে না।” অর্থাৎ, নেতানিয়াহুর পতন অনিবার্য। তার সরকারে উগ্রডানপন্থি দলগুলো রয়েছে, যারা হুমকি দিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হলে তারা সরকারের পতন ঘটাবে।
উগ্রপন্থি নেতা ইতামার বেন গিভির, যিনি দখলদার ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ছিলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শুরু হওয়ার পরই নেতানিয়াহুর জোট থেকে বেরিয়ে যান। অপরদিকে, অর্থমন্ত্রী বাজায়েল স্মোরিচও হুমকি দিয়েছেন, যদি নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপে এগোন, তবে তিনিও জোট থেকে বেরিয়ে যাবেন। এই চাপের মুখে, নেতানিয়াহু আবারও যুদ্ধ শুরুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
তবে হামাসের কাছে যেসব ইসরায়েলি জিম্মি আছেন, তাদের পরিবারগুলো দাবি জানাচ্ছে, যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করে যেন তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনা হয়। এই মানবিক আবেদনের প্রেক্ষাপটে, রাজনৈতিক সংকটের গভীরতা আরও বাড়ছে।
এভাবে, যুদ্ধবিরতির এই অন্ধকারে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে। নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত এবং উগ্রপন্থিদের চাপের মধ্যে, শান্তির সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে।