সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অব্যবহৃত তহবিল থেকে নিয়ে সরকারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী অন্য কাজে ব্যবহার করতে দেবে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি প্রকল্প ঋণ হিসেবে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবিরের সঙ্গে আলোচনা করতে সচিবালয়ে যান রেইজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে তাঁর আরেকটি বৈঠক হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যালয়ে।
এর আগে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পাইপলাইনে থাকা অর্থ থেকে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার বর্তমান অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে বা অন্য কোনো কাজে ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে।
গতকাল অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপদেষ্টার সঙ্গে কাঠামোগত সংস্কার, ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব কাজে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদার। এ অঞ্চলে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার বাংলাদেশ। আমরা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চাই।’
মার্টিন রেইজার বলেন, চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার বা তার চেয়েও বেশি সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু দেওয়া হবে বাজেট সহায়তা হিসেবে। বাকিটা স্বাস্থ্য, জ্বালানি ইত্যাদি খাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের চাহিদা অনুযায়ী আরও প্রকল্পে সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন করা ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাইপলাইনে রয়েছে। বর্তমানে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব অর্থের কিছু অংশ অন্য ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাজেট সহায়তা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, সার আমদানি, খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ইত্যাদি বিষয়ে কথা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও। বিশ্বব্যাংক এসব বিষয়ে সহায়তার ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক।
বাংলাদেশ যে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা বিশ্বব্যাংকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক নিজেদের পাশাপাশি অন্যান্য দাতা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তহবিল ও কারিগরি সহায়তা করবে।
এদিকে গতকাল বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ অর্থায়ন অর্থনীতির গতি বাড়ানো, বন্যার ক্ষতি মোকাবিলা, সরকারি ও আর্থিক খাতের সংস্কার, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাত গড়ে তোলা, উন্নত সেবা প্রদান এবং জলবায়ুর গুণমান ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে করা হয়নি।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বৈঠকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ডাকে আমরা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত।’
ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে এবং একটি নতুন সূচনা করতে জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক ম্যান্ডেট পেয়েছে। এখন সংস্কারের সময়। আমরা এখনই শুরু করতে চাই। জুলাই-আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান বিদ্যমান ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছে। তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে দুর্নীতি রোধ, শ্রম সংস্কার এবং যুবসমাজ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার শ্রম সংস্কারে আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করবে, যা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতায় সহায়তা করবে। এটি বাস্তবায়ন করে পোশাক ছাড়াও রপ্তানিতে অন্যান্য খাতে ভালো করা সম্ভব।