এডহক কমিটি গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাচিত কমিটি। এ ধরনের কমিটিকে অবৈধ আখ্যায়িত করে সমিতির গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনের কার্যনির্বাহক কমিটি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালে ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’ ব্যানারে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নজরে এসেছে। এতে গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত কার্যনির্বাহক কমিটির বিপরীতে নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের প্রার্থীদের সমন্বয়ে যে এডহক কমিটি গঠনের দাবি করা হয়েছে, তা যে কোনো সভ্য সমাজের আইন ও রীতিনীতির পরিপন্থি। বাংলাদেশের চার হাজার অর্থনীতিবিদের ঐতিহ্যবাহী একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এর তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবৈধ এডহক কমিটি গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে।
সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’ সৃষ্টি করে কতিপয় ব্যক্তি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার, কুৎসা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা চালিয়ে আসছেন এবং একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের অভিযোগ তুলে এডহক কমিটি গঠনের কথা বলছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন সাধারণ সভা ও কার্যনির্বাহক কমিটি নির্বাচন হয়। এতে ২৯টি পদে প্রার্থী দিয়ে প্যানেল পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে সহস্রাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে বিশাল মঞ্চে বিজয়ী প্যানেলকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার সত্ত্বেও শত শত শিশু-কিশোর-তরুণ ও সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী মুখোশে সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড করা সভ্য সমাজের আচরণ হতে পারে না।
এতে বলা হয়, সমিতির বিপুল সংখ্যক সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ শেষে সবার সামনে গণনাপ্রক্রিয়া সমাধা হয় আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচনি সফটওয়্যারে। বিশাল অডিটোরিয়ামে সব প্রার্থী ও সমিতির সদস্যের উপস্থিতিতে বড় স্ক্রিনে প্রতিটি ভোটের তথ্য সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও দীর্ঘ কয়েক মাস পর সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য সরকারি আইন এবং সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতিকারের সুযোগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তনকারী এক ক্রান্তিকালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা শোভন ও সমৃদ্ধ দেশ ও সমাজ গঠনের পথে গুরুতর অন্তরায়। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটি, সদস্যরা ও শুভানুধ্যায়ীরা ভাবমূর্তি ও শান্তি বিনষ্টকারী এ ধরনের অন্যায় কর্মকাণ্ড কোনো সময় সমর্থন করবে না।
প্রসঙ্গত, নডরটেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমানকে সভাপতি এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাহবুব-ই-জামিলকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
ড. মো. আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মাহবুব ই জামিল স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গত মে মাসে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট এডহক কমিটি ২০২৪ গঠন করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সমিতির নির্বাহী কমিটি এই সমিতির সুনাম ভাঙিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদে অধিষ্টিত হয়ে ব্যাংক খাতকে ধ্বংস করেছে। বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করেছে। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং গণহত্যায় মদদ দিয়ে অর্থনীতি সমিতির সদস্যদের চরম অপমাণিত করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সমিতির সদস্যদের মাঝে এ নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া তারা সমিতির নির্বাচনের নামে প্রহসন ও কারচুপি করে ১৮ বছর ধরে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। সমিতিতে অনেক আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির নির্বাহী কমিটি ভেঙে নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সভাপতি ও অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।