ইসরাইলের একের পর এক আক্রমণে থমথমে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। বছরের পর বছর ধরে ইসরাইল এবং ইরান সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছে। ইসরাইল গোপনে তেহরানের ক্ষতি করেছে।
ইরানি কর্মকর্তারা ইসরাইলি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। তবে এবারের হামলায় পালটা আক্রমণে ইসরাইলেও ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ফলে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। আসলেই কি ইসরাইল ইরানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত? বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল যখন ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র হিজবুল্লাহ স্থাপনা লক্ষ্য করে লেবাননে আক্রমণ চালায়, তখন ইসরাইলের ওপর ৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল ইরানের ওপর সরাসরি এবং আরও বেশি শক্তিশালী আক্রমণ চালাতে প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে।
আবার ইরানও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরাইল আঘাত হানলে তারাও চুপ থাকবে না। ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে ইরানি কৌশলের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ইওয়েল গুজানস্কি বলেছেন, ‘ইসরাইলের সেনাবাহিনী, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক এবং রাজনীতিবিদরা ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে, ইরানের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের শক্তিশালীভাবে জবাব দেওয়া উচিত।’
ইরান এর আগে তেল আবিবের নাগরিক এলাকায় আঘাত হানেনি। এমনকি এপ্রিলের আগের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানা হয়েছিল। সম্প্রতি নাগরিক এলাকায় আঘাত হানায় ক্ষুব্ধ ইসরাইলিদের কাছে হারানোর কিছু নেই উল্লেখ করে গুজানস্কি আরও বলেন, এখন বেশিরভাগ ইসরাইলি মনে করেন, ‘ইরানকে আরও বেশি ক্ষতি করার সুযোগ ইসরাইলের নেওয়া উচিত।’
আবার বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলিদের কাছে ইরান এখন আগের চেয়ে দুর্বল। কারণ সম্প্রতি ইসরাইল হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ নেতাদের হত্যা করেছে। তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের বড় অংশ ধ্বংস করেছে। এখন যদি ইসরাইল তেহরানের ওপর শক্তিশালী আক্রমণও চালায়, মিত্র হিজবুল্লাহর কাছ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ সাহায্য ও সমর্থন আশা করতে পারবে না ইরান। আর এ কারণেই গুজানস্কি বলেছেন, ‘যেহেতু ইরান এখন আগের চেয়ে অনেক দুর্বল। তাই ইসরাইল এখন আরও বেশি স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নিতে পারবে।’
অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মঙ্গলবারের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজ ইসরাইলকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অনুরোধের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলেও আশঙ্কা করছেন ওই কর্মকর্তা।
ইরানের প্রথম দফার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরাইল যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল, তার তুলনায় এবারের পালটা আক্রমণ অনেক বেশি শক্তিশালী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেবার ইসরাইল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা চালিয়েছিল এবং তা স্বীকার করেনি।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা মনে করেন, তখন হোয়াইট হাউজের আহ্বান শুনে ইরানের ওপর স্বল্প মাত্রায় আক্রমণ চালিয়ে ভুল করেছিল ইসরাইল। এবার ইসরাইল ইরানের তেল উৎপাদন কেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তেল শোধনাগারে আঘাত করলে ইরানের দুর্বল অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।