২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার। পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ আসে এ বাজার থেকে। চলতি বছরের প্রথম আট মাস অর্থাৎ গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ইইউ জোটে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৬৭ কোটি ডলার। দেশের মুদ্রায় ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক গবেষণায় বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউর বাজারে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে র্যাপিড। বর্তমান অবস্থায়ও ইইউতে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সে সম্ভাবনার জায়গায় উল্টো রপ্তানি কমে গেল।
অনেক কারণ একসঙ্গে কাজ করায় রপ্তানিতে এ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এর আগে-পরে প্রায় তিন সপ্তাহ আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হয়। নির্বাচনের আড়াই মাস আগে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য ইইউর অবাধ বাজার সুবিধা এভরিথিং বাট আর্মসের (ইবিএ) পরিসর আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান। এ অবস্থায় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর বিরুদ্ধে আদালতের রায় পশ্চাৎগামী পদক্ষেপ, যা উদ্বেগের। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইবিএ সুবিধা অব্যাহত রাখা উচিত কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দুই মাসের উত্তাল পরিস্থিতি, সরকারের পদত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বাংলা ব্লকে আমদানি, উৎপাদন ও রপ্তানি বিঘ্নিত হয়। এসব কারণে রপ্তানি কমে থাকতে পারে। একই কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারেও রপ্তানি কমেছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, রাজনৈতিক কারণের বাইরে অন্য বড় কারণের মধ্যে রয়েছে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানো। এক বছর আগের চেয়ে এখন নগদ সহায়তা কমেছে ৬০ শতাংশ। মজুরি বেড়েছে। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেড়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব ধরনের সেবা চার্জ বেড়েছে। তারপরও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ মিলছে না।
তিনি বলেন, প্রতিযোগী কোনো দেশের পরিস্থিতি এ রকম নয়। বরং অনেক দেশ তাদের বস্ত্র ও পোশাক খাতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া দুই বছর ধরে ইইউ জোটে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে ভিয়েতনাম। এসব কারণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বন্দর এবং কাস্টমস সেবার সংকট দূর, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের সমাধান ও পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আনা সম্ভব হলে ইউরোপ কিংবা আমেরিকা সব বাজারে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রয়েছে বাংলাদেশের।
ইইউর সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বছরের প্রথম আট মাসে ইইউ জোটে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৪৭ কোটি ডলার। মাসগুলোতে মােট প্রায় ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে জোটের দেশগুলোতে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২৯১ কোটি ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী কয়েকটি দেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। কম্বোডিয়ার ১৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ৭ শতাংশ এবং মরক্কোর ৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে কিছুটা কমেছে ভিয়েতনাম, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার।