শীতের সবজি আসায় ঠান্ডা হচ্ছে সবজির বাজার। তবে আলুর দরে নড়াচড়া শুরু হয়েছে পাইকারি-খুচরা দুইখানেই। আর ডিমের চড়া দাম কিছুটা কমে গত কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল।
আমদানি বাড়ার পরও দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আবার চড়তে শুরু করেছে; ছুটির দিনে বাজার করতে গিয়ে ক্রেতাদের একদিনের ব্যবধানেই বাড়তি গুনতে হয়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকার মত।
রান্নায় ব্যবহার করা এই নিত্য পণ্য বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরায় প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার তা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোর কোনো কোনোটিতে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশিতে।
পেঁয়াজের এমন ঝাঁজ বাড়তে থাকার সময়ে যেন আলুও নড়েচড়ে বসেছে। বেশ কিছু দিন ধরে প্রতি কেজি আলু পাইকারিতে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায় বিক্রি হলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার এ দর উঠেছে ৫০ টাকায়। খুচরায় এতদিন ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দাম উঠেছে ৬৫ টাকায়।
শুক্রবার ধানমন্ডির গ্রিন রোড এলাকা, কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার ও বিজয় সরণির কলমিলতা কাঁচাবাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা যায়।
গ্রিন রোডের গ্রিন কর্নারে মুদি দোকান ফাতেমা এন্টারপ্রাইজে দেশি পেঁয়াজ ১৩৫ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দোকানি আলুর দর বলেছেন প্রতি কেজি ৬৫ টাকা।
বিক্রেতা মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, “এগুলো পেঁয়াজ তো আগের আনা, তাই দাম কিছু কমেই পাইতেছে মানুষজন। আজ যেগুলো বাজার থেইকা আনছি সেগুলো আগামীকাল ১৪০ টাকার উপরে বেচুম। না হয় পোষাইতে পারুম না। প্রচুর দাম বাড়ছে।“
তার দোকান থেকে আধা কেজি আলু কিনলেন নূর আলম, যিনি গ্রিন রোড এলাকাতেই একটি বাসায় নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেখানে একাই রান্না করে খান। পরিবারের অন্যরা থাকেন নিজ এলাকা ফেনীতে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। বাড়িতে পাঠাই ৬ হাজার টাকা। তিন হাজার টাকার মধ্যেই আমার যাবতীয় হাত খরচ শেষে খাবারের জন্য থাকে অল্প কিছু টাকা। কোনোমতে জীবন চালাইতেছি।“
দুই সন্তানের জনক নূর আলম হতাশা নিয়েই দোকান থেকে ফিরছিলেন আর বলছিলেন, “দাম কোনো কিছুর কমবে না। যত কষ্ট সব আমাদের। আমাদের কষ্ট দেখে কে?”
এদিন কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে মানিকগঞ্জের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, পাবনার পেঁয়াজ ১৩৫ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৩ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সেখানকার খুচরা দোকানগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা এবং পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
পাইকারি দোকান কুতুবপুর বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, “গতকাল পেঁয়াজ বেচছি ১২০ থেকে ১২২ টাকা। আজ একদিনেই ১০ টাকা বাড়ছে। মাল এখন শেষ দিকে তো, তাই দাম বাড়বে আরও। দাম বেড়ে কত তে ঠেকবে তার কোনো হিসাব নাই।“
ডিসেম্বরে ক্ষেত থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা শুরু হলে বাজার কমবে। এর আগে আরও চড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার।
ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পেঁয়াজ সরবরাহকারী আব্দুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন দেশের পেঁয়াজ ফুরিয়ে আসতেছে। তাই আমদানি বাড়াতে হবে। না হয় দাম আরও বাড়বে।
বৃষ্টির কারণে এখনও মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানো শুরু না হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, অল্প কয়েকদিনের ভেতরেই পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে। লাগানোর পরে সেই পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগবে দুই মাস। এই দুই মাস পেঁয়াজের সংকট থাকবে।
তার মতে, আগামি কয়েকদিন আমদানির উপর নির্ভর করবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেমন থাকবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, ২০২৩ সালের এই দিনে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং আমদানি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজে ৪০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজে ৩০ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বাজারে বেড়েছে আদা-রসুনের দরও। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে আর আদার দর ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানেই বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকার মত।
কারওয়ান বাজরে আদা-রসুনের খুচরা বিক্রেতা মো. ইব্রাহিম বলেন, গত কয়েকদিনে রসুনে বাড়ছে ৫ থেকে ১০ টাকা এবং আদা বাড়ছে ২০ টাকার মত।
পেঁয়াজে তো অনেক বাড়ল একদিনেই।
“বৃহস্পতিবার পাবনারটা কিনছি ১২৮ টাকা কেজি আর আজ কিনতে হইছে ১৩৫ টাকায়।“
আলুর পাইকারি দোকান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, এখন মালের দাম একটু বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়ছে। বাজার বলছে আরও কিছু বাড়ব।
শীতের সবজিতে ঠান্ডা হচ্ছে সবজির বাজার
বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি চলে আসায় দাম কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা কমতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “শীতের কিছু কিছু সবজি যেমন- শিম, ফুলকপি ও মুলা বাজারে আইছে। তাই সব ধরনের সবজিতে দাম কিছুটা কমছে। আরও বেশি আসলে আরও দাম কমবে।“
বাজারে লম্বা ও সাদা গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। যদিও সপ্তাহখানেক আগে সাদা গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায় ও লম্বা বেগুন ১০০ টাকা কেজি দরে। লাল গোল বেগুনেও কমেছে ৮০ টাকার মত। বাজারগুলোতে এটি বিক্রি হতে দেখা গেছে ১০০ টাকা কেজি দরে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে টমেটোর দর ছিল ২৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে নেমেছিল ১৮০ টাকায়। এখন আরও ২০ টাকা কমে বিক্রি চলছে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
সপ্তাহের ব্যবধানে শিমেও কমেছে ৮০ টাকার মত, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, আগাম এই শিমের সরবরাহ বাড়ায় দামও কমছে। এর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে অন্য সবজির দরে।
এছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বাঁধাকপি, ঢেড়স, করলা ও প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বা একটু কমে।
বাজারে উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় ও বরবটি ১০০ টাকা কেজি দরে, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ও মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে শিমেও কমেছে ৮০ টাকার মত, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, আগাম এই শিমের সরবরাহ বাড়ায় দামও কমছে। এর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে অন্য সবজির দরে।
এছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বাঁধাকপি, ঢেড়স, করলা ও প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পটল ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বা একটু কমে।
বাজারে উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় ও বরবটি ১০০ টাকা কেজি দরে, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ও মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
দুই সপ্তাহ আগে মরিচের দর ৪০০ টাকায় উঠলেও এক সপ্তাহ ধরে ২০০ টাকায় বিক্রি চলছে। গত সপ্তাহে ২২০ টাকায় বা এর বেশি দরে বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
কলমিলতা বাজারের বিক্রেতা সবুজ আহমেদ বলেন, সবজির বাজার এখন ঠান্ডা হইছে আগের চেয়ে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে বাজারে শীতের সবজি ভরপুর আসবে বাজারে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা একরামুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন সবজির যে দাম তাতে মনে হচ্ছে না খুব একটা বেশি। তবে আরও কমলে আরও উপকার হয়। কিন্তু একটা জিনিসের দাম কমলে আরেকটা জিনিসের দাম বাড়ে।
এখন বাড়তে থাকা চাল আর পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ তার।
সপ্তাহখানেক আগে ব্রয়লারের দর ২১০ টাকায় উঠতে দেখা গেলেও শুক্রবার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। সোনালি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজিতে।
এদিকে আলোচনায় থাকা ডিমের দরও স্থিতিশীল থাকতে দেখা গেছে। সাদা ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজন এবং হালিতে দাম পড়ছে ৫০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানেও একই দর দেখা গেছে।
মাছের বাজারে ২০ টাকা কমে পাঙাস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে। রুই মাছেও কমেছে অন্তত ৪০ টাকার মত; বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকায় এবং তেলাপিয়ার দর আগের মতই দেখা গেছে, প্রতি কেজি ২০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, মাছের দাম এখন একটু কমতির দিকেই আছে। কেনাকাটাও কিছুটা কমে গেছে।
চাল আগের মত বাড়তি দরেই
সপ্তাহখানেক আগে বাজারে প্রতি কেজি চালে দর বেড়েছিল ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। সেই উচ্চমূল্যই বজায় থাকতে দেখা গেছে শুক্রবার।
বিজয় সরণি এলাকার কলমিলতা কাঁচাবাজারে ইমরান রাইসের বিক্রেতা সালমান খুচরায় প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা ৬০ টাকা, ব্রি-২৮ কেজি প্রতি ৬৫ টাকা, মিনিকেট ৭২ টাকা ও নাজিরশাইল মানভেদে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, “চালে আপাতত কমার কোনো লক্ষণ দেখি না। নতুন চাল আসলেই কেবল দাম কিছুটা কমতে পারে।