বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও গত ১৫ মাসে এই খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৯৬ হাজার শ্রমিক। তবে একই সময়ে নতুন করে বিজিএমইএর সদস্যপদ নিয়েছে ১২৮টি কারখানা। এই নতুন কারখানাগুলো পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে প্রায় ৭৪ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি, কেয়া গ্রুপের চারটি, টিএনজেডের চারটি এবং ভারগো এম এইচ, মডিশ অ্যাটায়ার, সিরোক অ্যাপারেলস, ওডিশ ক্রাফটসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি কারখানা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হয়ে যায়। এই কারখানাগুলোতে কর্মরত ছিলেন ৩১ হাজার ৬৭৯ জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ৫৬৫ জন কর্মচারী। তাদের পাওনা পরিশোধে সরকার ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও অনেক শ্রমিক এখনো তাদের পাওনা বুঝে পাননি। গত আগস্টের পর থেকে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা ৬৯টি। এতে কাজ হারিয়েছেন ৭৬ হাজার ৫০৪ জন শ্রমিক। বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মতো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের পোশাক খাত এগিয়ে গেলেও ছোট কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে একই সময়ে নতুন কারখানার বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানও বাড়ছে। পুরনো কারখানাগুলোতেও নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেশি। নতুন সদস্য হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো একেএইচ আউটওয়্যার, এ জেড কম্পোজিট, নেক্সটন, এলএসএ অ্যাপারেলস, সিটেক ফ্যাশন, সুপ্রিম আউটফিট এবং স্প্যারো গ্রিনটেক। নতুন ১২৮টি কারখানার মধ্যে ১৮টিতে এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করার সুযোগ থাকবে। দেশের তৈরি পোশাক খাতের এই উত্থান-পতন এবং পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে খাতটিকে আরও আধুনিক প্রযুক্তি এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।