বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা: গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদা পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শঙ্কা
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো এবং খরচ বাঁচাতে চালু হওয়া গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও ব্যয়ের আশঙ্কা নতুন করে দেখা দিয়েছে।
গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার কারণ কী?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের একাডেমিক স্বকীয়তা ও আইন অনুযায়ী তারা আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, আর্থিক কারণই এর পেছনে মূল চালিকা শক্তি। ভর্তির ফরম বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয় সরাসরি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পকেটে যাওয়ায় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ফরম বিক্রি শুরু করেছে। প্রাথমিক আবেদন ফি বাবদ তারা ১০০ টাকা করে নিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩৪ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় করেছে। চূড়ান্ত আবেদনের জন্য প্রতিজন শিক্ষার্থীকে ৭০০ টাকা দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ
গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসায় শিক্ষার্থীদের জন্য পুরোনো ভোগান্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদাভাবে পরীক্ষা হলে তাদের একাধিকবার ভ্রমণ করতে হবে, যা সময় ও অর্থের অপচয় ঘটাবে। একইসঙ্গে আলাদা পরীক্ষার কারণে পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কাও করছেন তারা।
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার সূচনা
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা প্রথম চালু হয় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে। কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি চালু করে। পরে সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪টি এবং তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে।
এছাড়া মেডিকেল কলেজগুলো দীর্ঘদিন ধরে একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও আটটি বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একই সুবিধা দিয়েছে।
আলাদা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, একসময় গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিলেও এবার তারা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ও একই পথ অনুসরণ করেছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হায়দার আলী বলেছেন,
“একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তবে শনিবারের সভার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
সমাধানের প্রস্তাব
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম বলেন,
“গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। তবে বেশির ভাগই গুচ্ছের পক্ষে। সীমাবদ্ধতা থাকলে তা সমাধান সম্ভব।”
সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও গুচ্ছ পদ্ধতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বায়ত্তশাসনের কারণে এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ সীমিত।
শিক্ষার্থীদের দাবি
শিক্ষার্থীরা গুচ্ছভিত্তিক পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বলছেন,
“গুচ্ছ পদ্ধতি চালু থাকলে খরচ ও ভোগান্তি কমবে। একইসঙ্গে আমাদের প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটবে না।”
বর্তমানে সারা দেশে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১৪টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।