মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ আবু সাঈদ হত্যা : ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপনের জন্য জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে এনবিআরে প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ, আন্দোলনকারীদের অবস্থান প্রকাশ ইরানে যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ২৫০ বাংলাদেশির দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন: সরকার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করলো ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) হজপালন শেষে দেশে ফিরলেন ৪০ হাজার ৫২০ জন হাজি

শুল্ক–কর বাড়ানো–কমানোর ক্ষমতা থাকবে না এনবিআরের হাতে

bornomalanews
  • Update Time : বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ১৩৪ Time View

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবিষ্যতে আর শুল্ক ও করের হার বাড়াতে বা কমাতে পারবে না, এমন এক সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এনবিআর এখন থেকে শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকবে। আর রাজস্ব নীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গঠন করা হবে আলাদা একটি সংস্থা, যা হবে ‘রাজস্ব নীতি কমিশন’। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য স্পষ্ট: একটি স্বাধীন এবং দক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে নীতি গ্রহণ এবং আদায় দুটি আলাদা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

পূর্বাপর: রাজস্ব নীতি ও আদায়ের একটি একক সংস্থা
এনবিআর, যা স্বাধীনতার পর থেকে রাজস্ব আদায় এবং শুল্ক-কর নীতির সমন্বয় করে আসছে, বর্তমানে আলাদা সংস্থা হিসেবে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক-কর–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আদায়ের ক্ষমতা আলাদা করার দাবি উঠেছিল, এবং এই সুপারিশকে পুঁজি করে সরকার একটি নতুন প্রস্তাবনা সামনে নিয়ে এসেছে। প্রথমে, আইআরডির (অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ) হাতে নীতির ক্ষমতা দেওয়ার আলোচনা হলেও, পরবর্তীতে তা বাদ দিয়ে একটি আলাদা কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিটির সুপারিশ: ভাগাভাগি নয়, দ্বৈততা
অন্তর্বর্তী রাজস্ব খাত সংস্কার কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়ে এ সুপারিশ করেছে যে রাজস্ব আদায় এবং নীতি গ্রহণ দুটি আলাদা কর্তৃপক্ষের হাতে দেওয়া উচিত। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে, অর্থ উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিটির নেতৃত্বদানকারী এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এই পরিবর্তনকে একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এনবিআরের বর্তমান কাঠামো এবং এর কাজের প্রতি অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। ‘রাজস্ব আদায় এবং নীতি গ্রহণের পৃথকীকরণে আরও দ্রুত কার্যক্রম চলবে’, বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম রায়হান, সানেমের নির্বাহী পরিচালক। এই পরিবর্তন, রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় গতির পাশাপাশি হয়রানি কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে।

রাজস্ব আদায়: এক বা একাধিক সংস্থা?
বিগত কয়েক দশক ধরে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে শুল্ক-কর নীতির প্রণয়নেও নিয়োজিত ছিল। একদিকে, তারা জাতীয় সংসদে অর্থবিল পেশ করত, অন্যদিকে, দেশের আর্থিক নীতি প্রণয়নেও ভূমিকা রাখত। তবে, পরামর্শক কমিটির মতে, এখন থেকে এনবিআর শুধুমাত্র শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে এবং রাজস্ব নীতির সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে রাজস্ব নীতি কমিশনের মাধ্যমে।

এই কমিশন হবে একটি স্বতন্ত্র গঠন, যার সদস্যরা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বড় ব্যবসায়ী সংগঠন এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। রাজস্ব নীতির প্রণয়ন এবং অনুমোদনের জন্য একটি স্থায়ী উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে, যা বছরের অন্তত চারবার বৈঠক করবে।

অর্থবিল প্রণয়ন ও বাজেটের সংশোধন: কমিশনের ভূমিকা
পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছে যে, রাজস্ব নীতির প্রণয়ন, বাজেটে শুল্ক-কর পরিবর্তন এবং অর্থবিল তৈরি সবকিছুই হবে এই কমিশনের হাতে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগে এই কাজগুলো করে আসছিল, কিন্তু এখন থেকে কমিশন এই দায়িত্ব গ্রহণ করবে, যা এনবিআরকে নিরপেক্ষভাবে শুল্ক-কর আদায় করতে সহায়তা করবে।

ভবিষ্যতের পদক্ষেপ: স্বাধীনতা এবং সুবিধা
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, শুল্ক-কর সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালগুলো এখন কমিশনের অধীনে চলে যাবে। পরামর্শক কমিটির সদস্যরা মনে করেন, যিনি রাজস্ব আদায় করেন, তিনি কখনোই কর নীতি নির্ধারণকারী হতে পারেন না। এটি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের সৃষ্টি করতে পারে।

কমিটির পরামর্শ এবং বাস্তবায়ন: একটি নতুন দিগন্ত
এনবিআরের সংস্কারের বিষয়ে পরামর্শক কমিটি সরকারের কাছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ করবে, যার মধ্যে থাকবে রাজস্ব নীতি, প্রশাসন, এনবিআরের আধুনিকায়ন, সুশাসন এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে দিকনির্দেশনা। এই পরামর্শগুলো বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে, যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত হবে।

রাজস্ব সংস্কারের এই পদক্ষেপগুলো এমন একটি চিরকালীন প্রক্রিয়া হতে পারে, যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং রাজস্ব নীতি কমিশনের মধ্যকার সমন্বয় দেশের উন্নয়নকে আরও সুদৃঢ় করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102