মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে ‘কিংস পার্টি’ বলা হচ্ছে কেন? ডিসেম্বরের টাইমলাইন অতিক্রম করতে চায় না নির্বাচন কমিশন: সিইসি ঈদের আগে ‘বড় সুখবর’ পেলেন সরকারি চাকরিজীবীরা পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু আইন প্রণয়নসহ ১৫ দাবি মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস নিশ্চিতকরণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত বিআইএফ এর সভাপতি বি এম ইউসুফ আলীকে এসজএ’র শুভেচ্ছা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৪ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ:আবু সাঈদ হত্যা

গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেস্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন পপসম্রাট আজম খান

bornomalanews
  • Update Time : শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫
  • ৭ Time View

নির্মাণের স্বীকৃতি, রঙিন গানের সুর, মুক্তিযুদ্ধের রক্তিম ইতিহাস এবং এক পপসম্রাটের আবেগঘন যাত্রার কাহিনি—সবকিছুই একসঙ্গে মিশে আজম খানকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫ এর জন্য নির্বাচিত করেছে। এরই মধ্যে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, এই বছর বিশেষ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন—আজম খান। এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তিতে একটানা প্রতিক্রিয়া এবং আলোচনা হচ্ছে।

আজম খান, যিনি বাঙালি সংস্কৃতির অমূল্য রত্ন, ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল মাহবুবুল হক খান, কিন্তু “পপসম্রাট” হিসেবে তিনি যে পরিচিতি লাভ করেছিলেন, তা এক ইতিহাস। শৈশব থেকেই তাকে ভেবেছিলেন অনন্য, ১৯৫৫ সালে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে পা রাখলেও, ১৯৫৬ সালে পরিবারসহ তিনি স্থায়ীভাবে কমলাপুরে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তার শৈশব-কৈশোরের সোনালী স্মৃতি গড়ে ওঠে, যা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সঙ্গী হয়ে থেকেছে।

এতটা সহজ ছিল না তার পথচলা। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময়, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন তিনি। তখনকার সময়ে, তিনি ছিলেন ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর অঙ্গীভূত সদস্য। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন আজম খান—যার গান, সুর, সঙ্গীত হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনরত বাংলার অটুট গাওয়া।

আজম খানের গান শুধু সমাজকে আন্দোলিত করেনি, বরং বাংলা সঙ্গীতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ১৯৭৪ সালে বিটিভির ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ গানটি দিয়ে তিনি মঞ্চে আলোচিত হন, এবং ১৯৮২ সালে প্রকাশিত তার প্রথম ক্যাসেট ‘এক যুগ’ ছিল এক যুগের সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে ১৯৯৯ সালে, যখন তার গাওয়া প্রথম সিডি মুক্তি পায়, ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়। আজম খানের গান—‘আমি যারে চাইরে’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘অ্যাকসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘আসি আসি বলে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’—এই সব গান যেন এক নতুন ভাষায় বাঙালির আবেগকে ছুঁয়ে গেছে।

তবে সঙ্গীতের পাশাপাশি তিনি অভিনয়েও মুগ্ধ করেছেন তার ভক্তদের। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নাটকে তার অভিনয় দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। ২০০৩ সালে ‘গডফাদার’ সিনেমায় তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন, যা তাকে চলচ্চিত্র দুনিয়াতেও একটি বিশেষ জায়গা এনে দেয়।

আজম খান ২০১১ সালে ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ সংগ্রামের পর পৃথিবী থেকে চলে যান। কিন্তু তার সৃষ্টি, তার গানের প্রতিধ্বনি আজও বেঁচে রয়েছে মানুষের মনে। ২০১৯ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়, এবং এবার, স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫—যা তার সঙ্গীতজীবনের একটি অতুলনীয় স্বীকৃতি।

আজম খানের অবদান শুধু সঙ্গীতের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তার প্রতিটি নোট, প্রতিটি সুর এক যুগের ইতিহাস হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তির মাধ্যমে, দেশের সংস্কৃতিতে তার অবদানকে সর্বোচ্চ সম্মান জানানো হচ্ছে—একটি সঙ্গীতজ্ঞের ঐতিহাসিক মর্যাদা যা কেবলমাত্র গুণী ব্যক্তির জন্যই সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102