যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এই সময়ের মধ্যে ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে, এবং বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, আয়কর গোয়েন্দা ১,৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে। এই তালিকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রমের আওতায় এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনদুর্ভোগ কমেছে। শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি, তবে মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ১ ডিসেম্বর। কমিশনার মো. আবদুর রকিবের নেতৃত্বে মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ইউনিটটি তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি ও অর্থপাচার শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, এবং রাজস্ব পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে। যদিও এই ইউনিট অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা দেখিয়েছে, তবুও প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবনের অভাব রয়েছে। কমিশনার মো. আবদুর রকিব জানান, জনবল সংকট ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব থাকলেও সদস্যদের মেধা ও পরিশ্রমের কারণে তারা ভালো কাজ করতে পারছেন। ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি এবং নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনার কাজও করবে এই ইউনিট। এভাবে, আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এবং একটি নতুন কর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।