জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ সফরে গণতন্ত্র, মানবিক সংহতি ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অঙ্গীকার নতুনভাবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছেন ইউনূস, জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন অধ্যাপক ইউনূস। বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তিনি গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বক্তব্য দেন এবং একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বাংলাদেশে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন দেশের গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার নিয়ে। বিশেষ গুরুত্ব বহন করে অধ্যাপক ইউনূসের সফরসঙ্গী তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল, যা এই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সফরে অংশ নেয়। তারা প্রবাসী কমিউনিটি, কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার বার্তা তুলে ধরেন। এ সফরে ইউনূস ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। আলোচনায় গণতন্ত্র, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব, ইউএনএইচসিআর, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সফরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল রোহিঙ্গা সংকট। অধ্যাপক ইউনূস ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় রাখেন যেন এ সংকট বৈশ্বিক মনোযোগ হারিয়ে না ফেলে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। এছাড়া, সরকারের জবাবদিহি ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ইউনূস জাতিসংঘকে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ার স্বাধীন মূল্যায়নের অনুরোধ করেন, যা দেশের স্বচ্ছতা ও গঠনমূলক মূল্যায়নের ইচ্ছার প্রতিফলন। সফরে বিদেশে কর্মসংস্থান প্রসার নিয়েও আলোচনা হয়, বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা প্রবাসী আয় বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেস সচিব। অধ্যাপক ইউনূসের এই সফর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি এবং বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে—বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের প্রতিনিধি সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।