অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছেন—এমন অভিযোগ এনে আলোচনার ঝড় তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বিভিন্ন গণমাধ্যম ও দলের সভায় এই প্রসঙ্গ তুলেছেন। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গে দলের নেতাদের বক্তব্য আসলে এনসিপিরই সার্বিক অবস্থান। তার মতে, সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের কেউ কেউ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ার উপায় খুঁজছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিচার ও সংস্কার নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা থাকলেও, কিছু উপদেষ্টা সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে চাইছেন। তবে নাহিদ ইসলাম বা সারজিস আলম কেউই নির্দিষ্ট কোনো উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করেননি। এই অভিযোগের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কোনো এক্সিট খুঁজছেন না এবং অতীতেও নানা সংকট মোকাবিলা করেই দেশে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার ভাষ্য, “বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে দেব।” তিনি আরও বলেন, এনসিপি নেতারা ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা অভিমান থেকেই হয়তো এমন মন্তব্য করেছেন, তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য তাদেরকেই দিতে হবে। অন্যদিকে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে জানান, ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ তার কাছে দুঃখজনক। তিনি লেখেন, “৭২+ বছর বয়সে যদি আমাকে সেফ এক্সিট ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়।” তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও নিজের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদও এনসিপি নেতাদের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক’ মন্তব্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, উপদেষ্টাদের কোনো সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই, কারণ তারা একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং দায়িত্ববোধ থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে, এনসিপি নেতাদের ‘সেফ এক্সিট’ অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। উপদেষ্টারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।