রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলাতেও এই রোগের সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা চলছে। গত জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেওয়া দুজনের মৃত্যুর পর, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয়রা নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, পীরগাছায় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন এবং গত দুই মাসে তিন শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে। অসুস্থ পশু জবাই ও মাংস নাড়াচাড়ার কারণে একই পরিবারের চারজনসহ অন্তত দশজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ, যা মূলত পশু থেকে মানুষে ছড়ায়। গরু, ছাগল ও ভেড়া এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। মানুষের মধ্যে রোগটি সাধারণত সরাসরি সংস্পর্শে নয়, বরং আক্রান্ত পশুর মাংস, চামড়া অথবা শ্বাসনালীর মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগের সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো ত্বকজনিত অ্যানথ্রাক্স, যেখানে ক্ষত বা কাটা জায়গা দিয়ে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে ফোঁটা, চুলকানি ও পরে কালো কেন্দ্রযুক্ত ঘা সৃষ্টি করে। এছাড়া, অপরিপক্ব মাংস খেলে বা সংক্রমিত বাতাসে শ্বাস নিলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ও শ্বাসজনিত অ্যানথ্রাক্স দেখা দিতে পারে, যা দ্রুত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ সাধারণ সর্দি-জ্বরের সঙ্গে মিল থাকতে পারে, তাই আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে অধিকাংশ সংক্রমণ নিরাময়যোগ্য। তবে অসুস্থ পশু জবাই, মাংস সংগ্রহ ও বিক্রি না করা, এবং মৃত বা অসুস্থ পশুর দেহ নিরাপদে পুড়িয়ে ফেলা—এ ধরনের সতর্কতা সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত জরুরি। দেশে অ্যানথ্রাক্স নতুন কোনো রোগ নয়—পীরগাছা, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় আগে থেকেই এই রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার নজির রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমানে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক মজুত রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, সচেতনতা ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া এই রোগ প্রতিরোধের অন্য কোনো বিকল্প নেই। হঠাৎ কোনো পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাংস ও চামড়া ব্যবহার করা যাবে না এবং প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তা নিতে হবে। অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, আক্রান্ত পশু ও মানুষের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। শুধু আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকর পদক্ষেপ ও সচেতনতা।