বিএনপি চার মাস নির্বাচনি মোডে: তারেক ফিরলে মাঠে পাল্টে যেতে পারে সবকিছু দেশ গতিইড়েমিতে না, বরং প্রতিটি মোড়ে ভোটের প্রস্তুতি দেখাচ্ছে—এবার সেটা কোর করে শুরু করেছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। চার মাসব্যাপী চলবে দলের কেন্দ্রীভূত প্রস্তুতি; এই সময়টা তারা কাটাতে চায় শুধুমাত্র প্রার্থী বাছাই, ইশতেহার রচনা ও গণসংযোগের মধ্য দিয়ে। দলীয় নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সূত্র বলছে, সময়টা পুরোপুরি নির্বাচনকেন্দ্রিক করা হয়েছে—সঙ্গত কিংবা কৌশলগত যে কোনো টানাপোড়েনকে সাময়িক এড়িয়ে রেখে। বৈঠকে নেওয়া প্রধান সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি তীব্র করা। এ লক্ষ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর দুই-তিন দিনের মধ্যে লন্ডন যাচ্ছেন; সেখানে তারেকের সঙ্গে দেখা করে ফেরার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে আনা হবে। দলীয় নেতারা বিশ্বাস করেন, মাঠে তৎপরতা বাড়ার সঙ্গে তারেকের দেশে ফেরা রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিতে সক্ষম হবে। প্রার্থী বাছাই ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতিই হবে দলীয় কর্মকাণ্ডের প্রাণবস্তু। তফসিলের ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের বিপরীতে ৭০-৮০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে বিএনপি; এর জন্য দায়িত্ব বণ্টন ও জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। দলীয় শাখা-সঙ্খ থেকে সংগ্রহ করা মাঠচিত্র, প্রার্থীর আমলনামা ও জনসমর্থন এসবই এখন নির্ধারণের মূল উপাদান। ইশতেহার প্রণয়নও দলের অগ্রাধিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অর্থবাণিজ্য ও পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কর্মদল তালিকাভুক্ত হয়েই কাজ শুরু করেছে—নবান্নের দাবিকে কেন্দ্র করে নয়, বাস্তবধর্মী সংস্কার আর সময়োপযোগী প্রতিশ্রুতির মতো লক্ষ্য নির্ধারিত আছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নিশ্চিত করছিলেন, এবার ইশতেহার হবে বাস্তবসম্মত এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নিবেদিত। নীতি-নীতিমালার বাইরে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্তও মাথায় রাখা হয়েছে—ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে সাধারণত রাজনৈতিক সংঘাত বা পাল্টা কর্মসূচি এড়ানো হবে। ফলে দলের সমগ্র শক্তি লাগবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে: বাড়ি বাড়ি যাওয়া, ভোটার মন জয়ের প্রচার, নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষণ ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা—এসবই থাকবে অগ্রাধিকার তালিকায়। বৈঠকে সরকারের সঙ্গে চলমান আলোচনা ও ঐকমত্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোও গুরুত্ব পেয়েছে। দলীয় নেতারা মনে করেন, যদি জাতীয় সনদ ও কমিশন নিয়ে ঐকমত্য না আসে বা স্বাক্ষরিত সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কী ধরনের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নেওয়া হবে—এই সম্ভাবনা নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়েছে। তবে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জোর দিয়ে বলেছেন, রাজনীতিতে স্থিতিশীলতাকেই তারা অগ্রাধিকার দেবেন; পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করলে সঙ্গত রাজনৈতিক জবাব দেয়া হবে। বিএনপি কোনো পক্ষকে স্বাভাবিকভাবে ঘাড়ে তুলে নিচ্ছে না—স্থায়ী কমিটির নানাভাবে দাবি ও আন্দোলনকে মেনে নেওয়ার আহ্বানও মিলেছে। জামায়াতসহ কিছু দলীয় বাহিনীর কর্মসূচি বিষয়ে নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন—কেউ যদি একাধিক কর্মসূচি ঘোষণায় স্ববিরোধী আচরণ করে, তা রাজনৈতিক টেবিলে বসেই সমাধান করা উচিত; রাস্তা-ঘাটের গণসংখ্যা কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল; স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচনমুখী কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। দলীয় স্ট্রাটেজি স্পষ্ট: মাঠেই ভোটের ঢেউ তোলা—তাই ভোটের হাওয়া তৈরি করে বিরোধীদের কৌশলকে অকার্যকর করা হবে। চূড়ান্ত বললে, আগামীর চার মাস বিএনপির জন্য পরীক্ষা-পরীক্ষার সময় হবে—প্রার্থী বাছাই থেকে ইশতেহার, তারেকের ফেরত এবং মাঠজোড়া গণসংযোগ; সব কিছু মিলিয়ে দলটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা ক্ষমতায় না পৌঁছালেও ভোটপ্রক্রিয়াকে প্রতিপাদ্য করে রাজনৈতিক জোর দেখাবে। রাজনৈতিক তাওয়াইফে যে সময়টা আরও উত্তপ্ত হবে, সে বিষয়ে সংশয় নেই; প্রশ্ন থাকে কেবল একটাই—বিএনপি তাদের কৌশল বাস্তবায়নে কতটা সাফল্য পাবে।