মামলার ভয়, কারখানা ভাঙচুর, দখল আর অগ্নিসংযোগে ব্যবসায়ীরা এক অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৈরি হওয়া এই অস্থিরতায় শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলগুলোতে তৈরি পোশাক খাতসহ বহু কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, শুধু আগস্টের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার শতাধিক কারখানা, যাদের মধ্যে অনেকগুলোতে উৎপাদন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কারখানা পাহারা দিয়েছেন, তবু শেষ পর্যন্ত সহিংসতার কবল এড়াতে পারেননি। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়নি, মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর অবিশ্বাস আর আতঙ্ক। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ তো দূরের কথা, অনেক উদ্যোক্তাই দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। যারা দেশে রয়ে গেছেন, তাদেরও বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে মামলা দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যবসার পরিবেশকে আরও সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হলে বেসরকারি খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। ইতিমধ্যে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানের ওপর। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩০ হাজারে। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩.৯৭ শতাংশে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির গতি থেমে যাচ্ছে। সরকার ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগের আশ্বাস দিয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়—দৃশ্যমান বাস্তবায়ন জরুরি। তারা দাবি করেছেন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, কারখানা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি ও পূর্বানুমেয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি খাত ছাড়া প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদি সরকার তার কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারে যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাহলে উদ্যোক্তারা ফের বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। আস্থা ফিরে এলেই অর্থনীতির চাকায় আবার গতি আসবে।