অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে আজ রবিবার প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ঘোষণা করেছেন, গত ১৬ বছরে ব্যাংক থেকে টাকা লোপাট ও অর্থ পাচারের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকার দাঁড়িয়েছে—কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া হবে এবং কেউ ছাড় পাবেন না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বহু লোপাটকারী গ্রেফতার হয়েছেন এবং বাকিদের ওপরও নজরদারি চালানো হচ্ছে; প্রয়োজনীয় প্রমাণ যাচাই হলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই সম্পূর্ণ আর্থিক অনিয়মের মামলা করা হবে। ড. আনিসুজ্জামীর উদাহরণ হিসেবে জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারাকাতের নাম তুলে ধরে তিনি জানান, বারাকাতকে বর্তমানে অন্য মামলায় আটক করা হয়েছে, তবে তার সময়ের আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কেও শিগগিরই মামলা করা হবে। তিনি স্পষ্ট করেন, বারাকাতের আমলে জনতা ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে সেগুলো সরকারের নজরদারিতে রয়েছে এবং প্রত্যেক টাকার হিসাব নেয়া হবে। যে কেউই আর্থিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি ও লুটপাট করে থাকলে সরকারের দোহাই নেই—তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আরও জানান, আর্থিক খাতে অনিয়মের মামলার জন্য প্রচুর পরিমাণে ডকুমেন্ট সংগ্রহ ও যাচাই প্রয়োজন, তাই হুট করে মামলা করা যায় না। এজন্য পাচার বা লুটপাটে জড়িতদের অনেককে প্রথমে অন্যান্য মোকাবেলার মামলায় আটক করা হলেও, প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুত আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হবে। টাকা পাচার রোধে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি করছে; প্রতিটি দেশের আইন ও প্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়ায় ফেরত আনতে সময় লাগছে বলে তিনি জানান। ড. আনিসুজ্জামীর মতে, গত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যেসব টাকা বিদেশে গেছে—সেগুলো যে দেশে থাকুক না কেন—ফিরিয়ে আনার সবরকম চেষ্টা চালানো হবে। কিছু দেশে পাচারকারীদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়া থাকায় টাকা ফেরত আনা কঠিন হচ্ছে, তবু সরকার আইনি ও কূটনৈতিক পথ দুটোই কাজে লাগাবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই কাজের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার সর্বোচ্চ হাতিয়ার হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক সম্মান ও মর্যাদা কাজে লাগানো হবে, যার ফলে দেশের পক্ষে সহায়তা চাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কম থাকবে। অর্থনৈতিক পরিবেশ ও নীতি-সংক্রান্ত প্রসঙ্গে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ক্ষমতায় দ্রুত পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গম্ভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি; জিডিপি নেতিবাচক না হওয়া ও সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাকে তিনি সরকারের সফলতা হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন—রাজস্ব নীতি নির্ধারণ ও রাজস্ব আদায় একই সংস্থার অধীনে থাকায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল; তাই নীতি-নির্ধারণ ও সংগ্রহ কার্য পৃথকীকরণকে যুগান্তকারী সংস্কার আখ্যা দিয়েছেন। কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও ঘুষপ্রদান আচরণ শুধুমাত্র আইন করেই মোকাবিলা করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে তিনি পোস্টিং ও নিয়োগে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা ও ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন জোরদারে আবেদন জানান। আর্থিক খাতের সংস্কার চালু রয়েছে এবং সময় সাপেক্ষ হলেও এগুলো অচিরেই দৃশ্যমান হবে—এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণজনিত সম্ভাব্য ঔষধের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত শঙ্কা প্রসঙ্গে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ ওষুধ বাংলাদেশে জেনেরিক হিসেবে উত্পাদিত হওয়ায় এতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই; কিছু প্রাধান্যপত্রভুক্ত ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কাজ চলছে এবং গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশ হওয়ার ফলে সরবরাহে ইতিবাচক ভূমিকা আশা করা যায়। শেষে তিনি ভবিষ্যৎ অর্থ পাচারকারীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি জোর দেন—সরকার এমন আইন ও বাস্তব ব্যবস্থা করবে যাতে যারা টাকা পাচার করার চিন্তা করবে, তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নারকে চেয়ার করে গঠিত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি এই টাস্কটা বাস্তবায়নে কাজ করছে—এমন তথ্যও তিনি জানান।