বর্ণনা: ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভার সাইডলাইনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এসব বৈঠকে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বহুমুখী সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা, অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অর্থায়ন বৃদ্ধির বিষয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো শর্তে আর বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে না। পুরনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করে প্রতিনিধিদল। ফলে আরও কোনো প্রতিকূল শর্তের ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়। সপ্তাহব্যাপী এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচি, ভবিষ্যৎ সহযোগিতা এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, সরকারি ঋণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা ও জ্বালানি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকায় আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল আসবে, যারা ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কারিগরি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় ইতোমধ্যে কিছু অর্থ শনাক্ত হয়েছে, যা ফেরত আনতে বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন বলে জানানো হয়। এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের নতুন সহজ শর্তের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ অতিরিক্ত ঋণ সহযোগিতা চেয়েছে। ওপেক ফান্ডের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি আমদানির জন্য ক্রেডিট লাইন বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়, কারণ দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও আমদানি ব্যয় বেড়েছে। একই সময়ে এডিবি, এআইআইবি ও জাইকার সঙ্গেও বৈঠকে অংশ নেয় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। এসব বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন ও চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। সব মিলিয়ে, বৈদেশিক ঋণ ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত এবং স্বার্থরক্ষায় অধিক মনোযোগী হয়ে উঠেছে—এটাই ছিল এ বছরের বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সভায় বাংলাদেশের মূল বার্তা।