বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিরাপদ বিনিয়োগের সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই প্রবণতার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও—ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বুধবার (৮ অক্টোবর) আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম এক মাসের ব্যবধানে ভরিপ্রতি প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বেড়ে যায়। ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি গ্রাম ১৪,৯৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৭,৯২৭ টাকায় পৌঁছেছে, যা ১৯.৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বর্ণের গয়না কেনাবেচা ৪০-৪৫ শতাংশ কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারও সমানতালে বাড়াতে হয়েছে। না হলে চোরাই পথে স্বর্ণ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে সোনা অস্থির সময়ে ‘মূল্য সংরক্ষণের’ নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ, যেখানে গত বছর এই বৃদ্ধির হার ছিল ২৭ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চাপ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, ইউক্রেইন সংঘাত, ফ্রান্স ও জাপানের রাজনৈতিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছে দেশগুলো। বিশেষ করে চীন ও ভারত স্বর্ণের মজুত বাড়াচ্ছে। ডলারের দরপতন ও সুদহার কমার পূর্বাভাসও সোনার চাহিদা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে স্বর্ণের দর নির্ধারণ করে বাজুস (বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন)। দর নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই তাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। না হলে দেশে সোনার সরবরাহ থাকবেই না। বাজুস ও পুরান ঢাকার জুয়েলার্সরা আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেশীয় দর সমন্বয় করেন। তবে দেশে ব্যবহৃত স্বর্ণের বেশিরভাগই আসে অপ্রাতিষ্ঠানিক বা চোরাই পথে, যার কারণে সরবরাহও কমে যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতা সংকট স্পষ্ট। বায়তুল মোকাররমের রিয়া জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী জানিয়েছেন, লোকজন এখন পুরোনো স্বর্ণে সামান্য অর্থ যোগ করে নতুন গয়না কিনছেন। আমিন জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তাদের ক্রেতা ৩০ শতাংশ কমে গেছে। মোনা জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী বলছেন, দাম বাড়ার কারণে দোকান বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা থাকে। গ্রামীণ জুয়েলার্সের মালিক জানিয়েছেন, নতুন স্বর্ণের বার আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে দোকানের মালামালও কমে যাচ্ছে। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা। বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে স্বর্ণের বিক্রি ৪০ শতাংশের মতো কমে গেছে। ক্রেতারা অপেক্ষা করছেন কখন দাম কমবে, ততদিন পর্যন্ত স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা বিদ্যমান থাকবে বলেই ধারণা ব্যবসায়ীদের।